ইসলাম ও জীবন

ইসলামে বিধবা নারীর মর্যাদা

  প্রতিনিধি ৩ মে ২০২৩ , ২:১১:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামিক ডেস্ক:

জীবন-মরণ একমাত্র আল্লাহর হাতে। কার কখন হায়াত ফুরাবে—তা কারো জানা নেই। স্ত্রীর আগে স্বামী মারা যায়, আবার স্বামীর আগেও স্ত্রী মারা যায়। কেউ কারো মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়। আমাদের সমাজে কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে ওই পরিবার ও সমাজের লোকদের অনুতাপ-ভাবনার সীমা থাকে না। বর্বর যুগের ন্যায় সেই অসভ্য রীতি আমাদের সমাজে দৃষ্টিগোচর হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মে বিধবাকে অবমূল্যায়ন করা হলেও ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে আজ অবধি বিধবাকে একজন মানুষ হিসেবে মূূল্যায়ন করেছে।

কখনোই অপয়া ও অলক্ষ্মী মনে করে না। কিন্তু মানুষ নির্মমভাবে বিধবাকে স্বামীখেকো বা এ ধরনের অযাচিত শব্দ বলে অভিহিত করে থাকে। অথচ স্বামীর মৃত্যুর ওপর কোনো ধরনের হাত থাকে না স্ত্রীর। এই কুসংস্কারের কারণে কত নারীকে জীবন হারাতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। রাসুল (সা.) নবুয়ত লাভের আগেই বিধবা নারী বিয়ে করে যেন পৃথিবীর বিধবাদের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। বিধবাদের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলের কণ্ঠে দ্যার্থহীনভাবে উচ্চারিত হয়েছে।

আউফ বিন মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি ও (নিজের যত্ন না নেওয়ায়) চেহারায় দাগ পড়া নারী পরকালে এভাবে থাকব অথবা শাহাদাত ও মধ্যমা আঙুলের চেয়ে বেশি দূরত্ব থাকবে আমাদের মধ্যে। সে হলো সেই নারী, যার স্বামী মারা গেছে এবং তার বংশীয় মর্যাদা ও সৌন্দর্য থাকার পরও সে নিজেকে বিরত রাখে এতিম সন্তানদের জন্য যতক্ষণ না সন্তানরা (স্বাবলম্বী হয়ে) পৃথক হয়ে যায় অথবা মারা যায়।
(আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৪৯)

আমাদের নবীজির বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি অসহায়, এতিম ও বিধবাদের সেবা করতেন। তিনি ছিলেন মানবতার নবী। মাজলুম ও নিগৃহীত সর্বদা তাঁকে পাশে পেত। রাসুলের চাচা আবু তালেব মহানবী (সা.) সম্পর্কে বলেন, তিনি শুভ্র, তার চেহারার অসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করা হতো, তিনি এতিমদের খাবার পরিবেশনকারী আর বিধবাদের তত্ত্বাবধায়ক।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০০৮)

যারা বিধবাদের যত্ন করবে, সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সাহায্য করবে তাদের জন্য রয়েছে বিশাল পুরস্কার। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড়ে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো,অথবা রাতে নামাজে দণ্ডায়মান ও দিনে রোজা রাখার মতো।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)

বিধবা নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া বা বিয়ে থেকে বারণ করা দুটোই অন্যায়। ইসলাম এ ব্যাপারে তাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। দেখুন, আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একজন স্ত্রী, আয়েশা (রা.) ছাড়া সম্মানিত স্ত্রীরা বিধবা ছিলেন। তাই বিধবা নারী যদি বিয়ে বসে একে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখার কোনো সুযোগ নেই ইসলামে। সর্বোপরি বিধবাকে ঘিরে যেসব কুসংস্কার রয়েছে, ইসলাম তা সমর্থন করে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন আমিন।

আরও খবর

Sponsered content

WP Twitter Auto Publish Powered By : XYZScripts.com