খবরের ডাকঘর, ডেস্ক: ১৫ মার্চ ২০২৩ , ১২:৫১:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
খবরের ডাকঘর, ডেস্ক: বিশ্ব অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়ন অংশীদারদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নত দেশগুলোকে বিশেষ নজর দিতে হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কারও কাছে করুণা বা দয়া চাই না। আমরা ন্যায্য অধিকার চাই। বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের অংশীদার হিসাবে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা চাই। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যৌথভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত সহজ শর্তে অর্থায়ন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি অনেক উন্নয়ন অংশীদার সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে যা বেশির ভাগ প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন-অর্থায়নকে অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর করে তুলছে। তাই একাধিক অর্থনৈতিক ধাক্কার প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বৈশ্বিক ব্যবসায়িক অংশীদাররা অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করছে যা সার্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, আইসিটিভিত্তিক উদ্যোক্তা, মানসম্পন্ন অবকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর কৌশলগত গুরুত্বারোপসহ অর্থায়নের নমনীয় পদ্ধতি এবং উদ্ভাবনী অর্থায়নের জন্য এডিবির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পালটা নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ব একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ ভূ-রাজনৈতিক সংকটের শিকার হলেও এর জন্য আমরা মোটেও দায়ী নই। বরং এটি কষ্টার্জিত অর্জনগুলোকে নস্যাৎ করছে এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে। এ সংকটের কোনো তাৎক্ষণিক সমাধান আমরা দেখতে পাচ্ছি না। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নিু আয়ের মানুষ আরও কষ্ট পাচ্ছে। তিনি বলেন, বেশির ভাগ দেশই খাদ্য, জ্বালানি এবং আর্থিকভাবে মারাÍক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। এর ফলে মুদ্রার অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবক্ষয় এবং মুদ্রাস্ফীতি আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কটি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হলো-এগুলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের দরিদ্রতম অংশকেই অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করছে। ৫০ বছর ধরে এডিবি আমাদের সঙ্গে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রায় সব খাতে এডিবির সহায়তা রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এডিবিকে তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় এডিবি ২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রলংকরী বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের জরুরি সহায়তা নিয়ে এডিবি এগিয়ে এসেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনে এডিবি স্বল্প-সুদে অর্থায়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে এডিবির সহায়তা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে তাদের সহযোগিতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এডিবির ক্রমবর্ধমান অবদান দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যা এডিবির পোর্টফোলিওতে বাংলাদেশকে তৃতীয় বৃহত্তম গ্রাহক করে তুলেছে। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে এডিবির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় ৫৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। গত দেড় দশকে বাংলাদেশ উন্নয়নের অভাবনীয় যাত্রার সাক্ষী হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা এ সময় ৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্য হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাস, সাক্ষরতার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং লিঙ্গ সমতা অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। কোভিড-১৯ মহামারি সফলভাবে আমরা মোকাবিলা করেছি। আমাদের এ উন্নয়ন প্রচেষ্টা বিশ্ব সম্প্রদায় দ্বারা স্বীকৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী বছরের মধ্যে আমরা দেড় ট্রিলিয়ন অর্থনীতির মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছি। বর্তমান জিডিপির আকারে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ধারাবাহিকভাবে এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে ২৮ এবং ২০৩৬ সালের মধ্যে ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে বাংলাদেশ পরিণত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পেরেছে। উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল আমাদের জন্য গৌরব, মর্যাদা ও যোগ্যতার প্রতীক। তিনি বলেন, আমাদের আশু লক্ষ্য হলো-২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, জ্ঞানভিত্তিক এবং স্মার্ট দেশ হিসাবে বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান। সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং। বাংলাদেশ-এডিবি সম্পর্ক কীভাবে বিকশিত হয়েছে এবং ৫০ বছরে ও সম্প্রতি বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে গেছে তার ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।