প্রতিনিধি ১৬ এপ্রিল ২০২৩ , ১:২৯:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান
এ বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে পাঠকের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান
বিয়ের সময় আমার বয়স ছিল ১৯ বছর। করোনাকালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়ি। ম্যাচিউরিটি কম ছিল। স্বামী আমার চেয়ে প্রায় ৯ বছরের বড়। তিনি ব্যাংকার। বিয়ের পর থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার বোঝাপড়ায় ঘাটতি তৈরি হয়। গালাগালি, ঝগড়া নিয়মিত হতেই থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ঝগড়া হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছায়। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভালো ছিল না। একপর্যায়ে বিয়ের আড়াই বছর পর রাজশাহীতে মায়ের বাড়ি চলে আসি। কিছুদিন পরই আমি বিয়েবিচ্ছেদের আবেদন করি। এরপর জানতে পারি, আমি প্রায় ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ কথা জানার পর থেকেই আমার স্বামীর মধ্যে একরকম পরিবর্তন চোখে পড়ে। তিনি প্রতিদিন ফোনে আমার খোঁজ নেন। আমাদের বাড়িতে দেখা করতে এলে আমার মা তাঁকে অপমান করে বের করে দেন। পরে তিনি বাড়ির বাইরে আমার সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছেন। প্রায় আড়াই বছর ধরে যে মানুষটিকে চিনি, এখন যেন তাঁর অন্য রূপ দেখছি। আমি এর মধ্যে মানসিক চাপের জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শও নিয়েছি। সঙ্গে আমার স্বামীও গেছেন।
ডিভোর্স নোটিশের তিন মাসের মধ্যে তা কার্যকর হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে তিন মাস পার হয়েছে। আমার স্বামী কি এখন প্রাক্তন হয়ে গেছে! আমরা দু’জনই আবার নতুন করে শুরু করতে চাই। আইনত করণীয় সম্পর্কে জানাবেন।
ফাহিমা জাহান, রাজশাহী
প্রিয় ফাহিমা
আপনি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৮ ধারার আওতায় করেছেন। ৭ ধারা অনুযায়ী, বিচ্ছেদের নোটিশের পর তিন মাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়াতে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। তারপর সালিশি পরিষদ একটি হাওলা দেয়। সেই হাওলা কাজি অফিসে জমা দিলে তালাকের সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। এই সার্টিফিকেট পাওয়ার পর আপনি নতুন করে বিয়ে করতে পারেন। মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী, আপনি আপনার প্রাক্তন স্বামীকেও পুনরায় বিয়ে করতে পারেন। হিল্লা বিয়ের প্রয়োজন নেই; কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে আরেকটা ব্যাপার আছে। বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ দেওয়ার সময় আপনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সে ক্ষেত্রে এই আইনের ধারা ৭ (৫) অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক ওই সময় হয় না। এমন অবস্থায় আপনি সালিশি পরিষদকে পুনরায় চিঠি লিখে বলতে পারেন, যেহেতু আপনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, আপনার নোটিশ ওই সময়ে কার্যকর হবে না এবং আপনি আপনার নোটিশ তুলে নিচ্ছেন, যাতে পরেও কার্যকর না হয়। আপনি আপনার স্বামীর সঙ্গে সংসার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ রকম কথা নোটিশে লিখলে সালিশি পরিষদ বিষয়টি বুঝবে এবং আপনাদের আর পুনরায় বিয়ে করতে হবে না।
তবে আইনি পরামর্শের বাইরে আপনাকে একটা উপদেশ দিতে চাচ্ছি। সাধারণত যেসব মানুষের মারধর করার অভ্যাস থাকে, সেই অভ্যাস সহজে ঠিক হয় না। কারও সঙ্গে জীবন কাটানোর বিষয়টি অনেক বড় সিদ্ধান্ত। আমরা একটি নিপীড়নমূলক সম্পর্কে সুখী থাকতে পারি না। মা-বাবা বা আত্মীয়রা চান সংসার না ভাঙুক; কিন্তু দিন শেষে আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গুরুতর নির্যাতনের ফলে অনেক নারী প্রাণও হারান। আমাদের সমাজে এমন লোকজনও আছেন, যাঁরা প্রয়োজনে ভালো ব্যবহার করেন, আবার কিছুদিন পর দুর্ব্যবহার করেন। সাইকোথেরাপিস্টদের মতে, তাঁরা নার্সিসিস্ট। আপনার স্বামী হতে পারেন, নাও হতে পারেন। তবে এই মুহূর্তে আপনার পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা দরকার। আপনি নোটিশ তুলে আপনার স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পারেন। তবে চাইলে জিডি করে থানায় জানিয়ে রাখতে পারেন, আপনার সঙ্গে মারধরের ঘটনা ঘটেছিল। আপনি আপনার শিশুর কারণে ফিরে যাচ্ছেন। পরে কিছু যদি হয় থানার কাছে আগাম তথ্য থাকবে। জিডির নাম্বার ও একটি কপি মা-বাবাকে দিয়ে রাখতে পারেন। চোখ-কান খোলা রেখেই বিবাহিত সম্পর্কে আবার ফিরে যেতে পারেন।