ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
গত বছর তিনি অসুস্থতার কারণে এইচএসসির এক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে না পারায় ফলাফলে ওই বিষয়ে অকৃতকার্য হন। এ অবস্থায় ওই সময় স্বামীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি দেন। সেখান থেকেই দেশে খোঁজখবর রাখেন কখন ফরম পূরণ, আদৌ পরীক্ষা দিতে পারবেন কি না ইত্যাদি। পরে ফরম পূরণ করে শতভাগ নিশ্চিত হয়েই দেশে আসেন তিনি।
কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই যথানিয়মে ফরম পূরণ হয়নি তার। ফলে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত পরীক্ষাটি দিতে পারেননি তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই পরীক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বনাটি গ্রামের রমজান মিয়ার মেয়ে।
নান্দাইলের সমূর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় বিএম শাখা থেকে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসা ব্যবস্থাপনা (বিষয় কোড-২৪২৮) বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারেননি। নিয়ম অনুযায়ী পরের বছর ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই বিশ্বাসে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করা স্বামীর সঙ্গে চলে যান।কিন্তু ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ওই একটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য নিজে বিদেশে থেকেই এক মামার মাধ্যমে কলেজে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।
এ অবস্থায় গত ২৬ জুলাই ফারিয়া আক্তার তার মামা সাদেক হোসেন ভূইয়ার মাধ্যমে ওই বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে রসিদমূলে দুই হাজার ১০০ টাকা জমা দিয়ে ফরম পূরণ করেন। পরে ৩০ আগস্ট কলেজ কর্তৃপক্ষের কথামতো ফারিয়া আক্তারের প্রবেশপত্র আনতে কলেজে যান তার মামা। প্রবেশপত্র না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাকে কয়েক দিন পর আসতে বলেন। পরে গেলেও প্রবেশপত্র আসেনি বলে জানানো হয়।
ফারিয়ার মামাকে জানানো হয়, ফারিয়ার ফরম পূরণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তাই ঢাকা থেকে করিয়ে আনতে চার-পাঁচ দিনের সময় চেয়ে আরো ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার কথা চিন্তা করে ১০ হাজার টাকাও প্রদান করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার পরীক্ষার দিন ১০ সেপ্টেম্বর সোমবার পর্যন্ত ওই পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দিতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রবেশপত্র না পাওয়ায় ওই পরীক্ষার্থীর পক্ষে আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সম্ভব হয়নি।
ফারিয়া আক্তারের মামা সাদেক হোসেন ভূইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি, ফরম পূরণ নিশ্চিত হলে তারা যেন আমাকে জানায়। তাহলে ফারিয়াকে পরীক্ষা দিতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে আসতে বলব। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। এখন ফারিয়া দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে এলেও পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন অবহেলাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমূর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জ্যোতিষ চন্দ্র সাহা রায় জানান, ফরম পূরণের জন্য একটি কমিটি থাকে। ফারিয়া আক্তারের লোকজন ওই কমিটিকে পাস কাটিয়ে অন্যদের মাধ্যমে ফরম পূরণের টাকা জমা দিয়েছেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে তার ফরম পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সঠিক সময়ে জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নান্দাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম জানান, তিনি দ্রুত তদন্ত করবেন।
আমাদের পেইজ- https://www.facebook.com/dailykhoborerdakgor/
আমাদের গ্রুপ- https://www.facebook.com/groups/dailykhoborerdakgor/
আমাদের ইউটিউব- https://www.youtube.com/channel/UC9r4_s-LK0mucm34GjjmZqg