প্রতিনিধি ২২ মে ২০২৩ , ৮:১০:২২ প্রিন্ট সংস্করণ
জেলা প্রতিনিধি পাবনা:
রাতের অন্ধকারে চুরি করা হয় বিদ্যুতের মিটার। এরপর মিটার বোর্ডে মোবাইল নম্বর লিখে বলা হয়- ‘মিটার ফেরত পেতে এ নম্বরে যোগাযোগ করুন। ফোন করলে দাবি করা হয় ৫ হাজার টাকা। বিকাশ নম্বরে টাকা পরিশোধ করলেই মিটার কোথায় লুকিয়ে রাখা আছে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়।
এভাবেই চোরচক্র পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ (চাটমোহর) এর অধীন চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর ও আটঘরিয়া উপজেলায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করছে। চক্রটিকে টাকা দিলেই মিলছে মিটার। একের পর এক মিটার, ট্রান্সফরমার ও তার চুরি করলেও তারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চোর খুঁজে পাচ্ছে না। গচ্চা যাচ্ছে গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা।
সর্বশেষ ১৫ মে সোমবার রাতে হরিপুর ইউনিয়নের বুড়িপাড়া এলাকায় মিটার চুরির সময় এলাকাবাসীর ধাওয়ায় পালিয়ে যায় চোর।
হরিপুর ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের বাসিন্দা সোলায়মান হোসেন। তিনি নারিকেলপাড়া মৌজায় স্থাপিত পানাসি প্রকল্পে কর্মরত। তিনি জানান, গত ৫ মে রাতে কে বা কারা তাদের গভীর নলকূপের মিটার চুরি করে। ৬ মে সকালে তিনি দেখেন মিটার নেই। মিটারের পাশে পলিথিনের ভেতর একটি মোবাইল নম্বর লেখা রয়েছে। মিটার ফেরত পেতে ওই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার পর মিটার ফেরত বাবদ ৫ হাজার টাকা দাবি করে চক্রটি। তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে হাজার টাকা পাঠানো হয়। পরে তারা জানান, মিটার নারিকেলপাড়া ইটের ভাটার পাশে জঙ্গলের মধ্যে রাখা আছে। সেখানে গেলে মিটারটি পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে তারা থানায় অভিযোগ করতে বলে। থানায় অভিযোগ করার পর ৭ মে পুনঃসংযোগ দিয়েছে বিদ্যুৎ অফিস। কিন্তু এখনও ধরা পড়েনি চক্রটি।
চাটমোহর পৌর সদরের মধ্যশালিখা মহল্লার জুয়েল মির্জা জানান, পানাসি প্রকল্পের অধীনে একটি গভীর নলকূপ পরিচালনা করেন তারা। গত শুক্রবার রাতে নলকূপের মিটার চুরি হয়ে যায়। দরকষাকষিতে সর্বশেষ ৩ হাজার ৬০ টাকায় মিটার ফেরত দিতে রাজি হয় চোরচক্র। এর মধ্যে তাদের প্রকল্প থেকে ৩০-৪০টি মিটার চুরি করে টাকার বিনিময়ে ফেরত দিয়েছে।
মূলগ্রামের আব্দুস সালাম জানান, তাদের যৌথ মালিকানাধীন গভীর নলকূপের ৬০ ফুট বৈদ্যুতিক তার গত শুক্রবার ভোরে চুরি হয়। এ ঘটনায় ৫ মে মূলগ্রামের রবিউল ইসলামসহ তিনজনের নামে থানায় অভিযোগ করা হয়। চাটমোহরের সাবেক মেয়র অধ্যাপক আব্দুল মান্নানসহ অনেকের মিটার, ট্রান্সফরমার ও তার চুরির ঘটনা ঘটেছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, মিটারের পাশে পাহারাদার না থাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। আমরা মোবাইল ট্র্যাকিংসহ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। চোর ধরতে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।
পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আকমল হোসেন সমকালকে বলেন, গত এক মাসে ১৬টি মিটার চুরি হয়েছে। কারখানার মালিক, গভীর-অগভীর নলকূপ কর্তৃপক্ষসহ গ্রাহকরা সচেতন হলে মিটার চুরি কমবে। এ ছাড়া চুরি রোধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।