পানছরি খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: ১২ এপ্রিল ২০২৩ , ৮:৩২:০০ প্রিন্ট সংস্করণ
পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বৈসাবি শুরু হয়েছে। পুরনো বছরের গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে রাঙাতে পাড়া-মহল্লায় উৎসবের আমেজ। উৎসবকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামজুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে তুরু তুরু তুরু রু বাজি বাজত্তে, পাড়ায় পাড়ায় বেরেবং বেক্কুন মিলিনে, এচ্যে বিজু, বিজু, বিজু। ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই আর চাকমাদের বিজুর আদ্যক্ষর নিয়ে বৈসাবি। পাহাড়ে বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর প্রধানতম সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব এটি।
আজ বুধবার থেকে চাকমাদের ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়েছে। চৈত্রসংক্রান্তির শেষ দুই দিন ও বাংলা বর্ষের প্রথম দিন—এই তিন দিন মূলত বিজু পালন করে চাকমারা। এ ছাড়া চৈত্রসংক্রান্তির দিন থেকে ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসব। মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু হয় নববর্ষের দিন থেকে। বৈসাবি উদযাপনে এবারও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পাহাড়িরা। সবখানেই উৎসবমুখর পরিবেশ। বর্ষবরণের ধারণায় ভিন্নতা থাকলেও উৎসবে মিলিত হয় সবাই। বৈসাবিকে ঘিরে এরই মধ্যে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সামাজিক কৃষ্টি-সংস্কৃতির নানা বৈচিত্র্যে মেতেছে পাহাড়িরা।
শান্তি আর আনন্দের প্রত্যাশায় চেংগী নদীতে ফুল ভাসিয়ে পানছড়িতে শুরু হয়েছে বিজু উৎসব। উৎসবের প্রথম দিনেই শান্তিপুর রাবার ড্যাম এলাকায় নানান রঙের ফুল নিয়ে হাজির হয় সহশ্রাধিক মানুষ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকের পরে মাথায় ফুল, কানে দুল আর আলতা মাখা নুপুর পায়ে যোগ দেয় উৎসবে। ব্যান্ড পার্টির ডাক আর ঢোলের বাড়ির সঙ্গে নাচে-গানে মুখরিত করে তোলে পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক ও শান্তিপুর রাবার ড্যাম এলাকা। সকাল ৮টার দিকে চেংগী নদীতে ফুল ভাসানোর সাথে সাথেই চেংগী নদী যেন ফুলের নদীতে পরিণত হয়। পানিতে ফুল ভেসে যাওয়ার দৃশ্য ছিল নজরকাড়া।
উপজেলা প্যানেল চেয়ারম্যান চন্দ্র দেব চাকমা, উৎসব কমিটির প্রধান ১নং লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমা, ২নং চেংগী ইউপি চেয়ারম্যান আনন্দজয় চাকমার নেতৃত্বে বিশালাকার র্যালী প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চেংগী নদীতে এসে ফুল ভাসায়।
পানছড়ির চৌধুরী পাড়ায় মারমা সম্প্রদায় দারুণ আনন্দে পালন করেছে সাংগ্রাই উৎসব। পানছড়ি মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তারা আয়োজন করেছিল জলকেলী। ঐতিহ্যবাহী মারমা পোশাকে নেচে-গেয়ে পানি মেরে জলকেলীর শতভাগ তৃপ্তির স্বাদ নেয় তারা।
এদিকে, বৈসু উদযাপনে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একটি র্যালী প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী চান্দের গাড়িতে চড়ে নাচে আর গানে সড়ক মাতিয়ে রাখে। র্যালী পরবর্তী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় আদি ত্রিপুরা পাড়া এলাকায়।
আগামীকাল ১৩ এপ্রিল পালন করা হবে মূল বিঝু। আর ১৪ এপ্রিল তৃতীয় দিনটি হলো গজ্জ্যেপজ্জ্যে।