সারাদেশ

পুলিশের অবদানে পুরস্কার নয় স্বীকৃতি চাই, মাকসুদুর রহমান মুরাদ

  প্রতিনিধি ২৯ আগস্ট ২০২৩ , ১:৫৬:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

খবরের ডাকঘর ডেস্ক

১৮৬১ সালে পুলিশ বাহিনী গঠনের পর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পর্যন্ত ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় পুলিশ কখনোই দেশ, দেশের জনগন এবং সরকারের সাথে বেঈমানী করেনি, তদুপরি দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত পুলিশের অবদান ও আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় উপেক্ষিত থেকে গেছে ।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক সৈন্যদের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে এক রাতে আট শতাধিক পুলিশ সদস্য শহীদ হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন তৎকালীন ঝিনাইদহ মহকুমার এসডিপিও (পুলিশ প্রশাসন) মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে বাঙ্গালী পুলিশ সদস্যরা প্রায় সকল থানার অস্ত্র লুট করে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে দেয় এবং নিজেরা যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ডিআইজিসহ কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য শহীদ হলেও স্বাধীনতার পর পুরস্কারের তালিকায়

রেখেছে শূন্য করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ীতে স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঁচাতে পুলিশের এএসআই ছিদ্দিকুর রহমান নিহত হন, গুলিবিদ্ধ হন ডিএসপি নূরুল ইসলাম, কিন্তু সে আগস্টের শহীদের তালিকায় কর্নেল জামিল সাহেব

এর নাম ও ছবি থাকলেও নেই এএসআই ছিদ্দিকুরের নাম কিংবা ছবি।

একটি মহল কখনই পুলিশকে সঠিক মূল্যয়ন করেনা, করতে চায় না। যারা রাষ্ট্র ক্ষমতার লোভে নিজের দেশের সরকারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তারা সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এবং মুখে বড় কথা বলে। অথচ পুলিশ কখনোই নিজ স্বার্থে আইনকে ব্যবহার করেনি। সংবিধান থেকে শুরু করে প্রচলিত সকল আইন, বিধি, অধ্যাদেশ অনুযায়ী পুলিশকে তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। পুলিশ কখনোই দু’পক্ষকে খুশি করতে পারেনা। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী কোন না কোন ভাবে পুলিশের মামলায় জড়িয়ে যাচ্ছে বা মামলার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের চোঁখে পুলিশের ভালো দিকগুলো ফুটে ওঠে না। এজন্য মিডিয়ায় পুলিশের নেতিবাচক খবর অনেকেই পছন্দ করে। দেশের অনেক দপ্তরে অনেক কর্মচারী- কর্মকর্তা মামলায় জেল খেটেছেন, বরখাস্ত হয়েছেন তার কি কোন তালিকা মিডিয়ায় প্রকাশ পায়? একটি মহল সেটাকে প্রকাশ করতে চায়না।

স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও দেশের ক্রান্তিলগ্নে যে কোন মহামারী, অভিমারী, আইন শৃংঙ্খলা রক্ষা, নির্বাচন, অবরোধ, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, ধর্মীয় বিরোধসহ যে কোন দুর্যোগে পুলিশের অবদান সব সময় খাঁটো চোঁখে দেখা যায়। মনে করুন তো ২০২০ সালের অতিমারীর কথা! যেখানে মা তার ছেলেকে ফেলে দেয়, সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে পালিয়ে যায়, সেখানে পুলিশ সদস্যরা নিজের জীবন আত্মোৎসর্গ করে মানুষের পাশে থেকে খাবার পৌঁছে দিয়েছে, নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে, মৃত্যুর পর ফেলে রাখা লাশ দাফনের ব্যবস্থাও করেছে। কিন্তু অতিমারী কেঁটে যেতেই সরকারের অনেক দপ্তর সুযোগ সুবিধা পেতে নিজেদের সিকি অবদানকে পাহাড়সম প্রচার করতে উঠে পড়ে লেগেছে। লক্ষণীয়, দু’লক্ষাধিক পুলিশবাহিনীর কোন সদস্য কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়লে সেটাকে ঢালাও প্রচার করে মানুষের মনে পুলিশের বীরত্বগাথা অর্জনগুলো মুছে দিয়েছে।

দেশের প্রায় সকল দপ্তর তাদের দাবী-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে, ধর্মঘটও করে। কিন্তু পুলিশের শত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কখনো কি দাবী-দাওয়া আদায়ে ধর্মঘট দিতে পেরেছে? দেয়নি, কারণ পুলিশ যদি এক ঘন্টাও কর্মবিরতি দেয় তাহলে দেশে কি পরিমান আইন-শৃংঙ্খলার অবনতি হবে তা সহজেই অনুমেয়। আসলে ইতিহাস লেখার কোন নির্দিষ্ট মাধ্যম নেই। প্রতিবছর লেখালেখি, সংবাদ পত্র এবং ছবির মাধ্যমে ভাল কাজের মূল্যায়ন ফুটে ওঠে অথচ পুলিশের অবদানের তথ্যচিত্র থাকে চরম উপেক্ষিত।

লন্ডনের পুলিশের তুলনা শুনি, লন্ডনের নাগরিক হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই কারো, তাই স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে জনতার পুলিশ হওয়ার লক্ষ্যে পুলিশের অনৈতিক কাজের সমালোচনা হোক একি সাথে পুলিশের ভালো কাজের মূল্যায়নও হোক। পরিশেষে বলবো পুলিশের অবদানে পুরস্কার চাই না, অন্তত স্বীকৃতি চাই।

লেখক: অফিসার ইনচার্জ, তজুমদ্দিন থানা, ভোলা।

আরও খবর

Sponsered content

WP Twitter Auto Publish Powered By : XYZScripts.com