সারাদেশ

পুষ্টির অভাবে উচ্চতা কমছে শিশুদের

  খবরের ডাকঘর ডেস্ক: ১২ এপ্রিল ২০২৩ , ৭:৩২:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

আজকের শিশু আগামী দিনের অবিষ্যত। তাই আগামীর ভবিষ্যতের দিকে নজর রাখতে হবে। যাতে একটি শিশু যথার্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে। একজন শিশু কেবলমাত্র পড়াশোনায় ভালো হলেই চলবে না। তার শারিরীক বৃদ্ধি বা যথার্থভাবে শরীরের গঠন ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেদিকে বাবা-মার নজর দিতে হবে। 

কেননা অনেক সময়ই দেখা যায় বয়সের অনুপাতে ছেলে-মেয়েদের শারিরীক গঠন ঠিকমতো হচ্ছে না। এ জন্য অনেক ছেলে-মেয়েই থাকছে খর্বাকৃতির বা সহজ কথায় খাটো। আর এমনটা হলে ওই ছেলে-মেয়েদের পড়তে হয় সামাজিক বিড়ম্বনায়। যা তার মানসিকতায়ও প্রভাব ফেলে। 

ফলে অনেক সময়ই সে তার সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতে পারেনা বা তাকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ছেলে-মেয়ের শরীর ঠিকমকেতা না বাড়ার পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে পুষ্টির অভাব। যে কারণে শারিরীকভাবে সঠিকভাবে বেড়ে না ওঠায় ছেলে-মেয়েদের পড়তে বিড়ম্বনায়। 

যেমন ১৪ বছর বয়সী রাইমার (ছদ্মনাম) প্রায়ই সময়ই মন খারাপ থাকে। দুই বোন এবং এক ভাইয়ের মধ্যে সে মেজ। বাবা-মা দু’জনেরই শারীরিক গঠন এবং উচ্চতা ভালো। অন্য এক বোন আর ভাইয়েরও শারীরিক গঠন ভালো। 

কিন্তু রাইমার বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম। খাটোই বলা যায়। আর তাই স্কুলের অনেকেই তাকে খোঁটা দেয়। আবার পাড়ায়ও তার তেমন কোন বন্ধু নেই। খেলতে গেলেই বন্ধুরা বলে তুমি তো ছোট। পারবে না। এখন আর সে তেমন বাইরেও যায় না। স্কুল শেষে প্রায়ই সময় ঘরেই বসে থাকে। আর জানালা দিয়ে অন্য বাচ্চাদের খেলা দেখে।

রাইমার মতো ১৭ বছর বয়সী শাহীনের শারীরিক গঠনও একই। সেও তার বয়সের তুলনায় যথেষ্ট খাঁটো। এইচএসসি প্রথম বর্ষেও ছাত্র হলেও তাকে দেখে মনে হয় এখনো সে ক্লাস সিক্সের। 

স্কুল-কলেজের বন্ধুরাও তাকে নিয়ে অনেক ঠাট্টা-তামাশা করে। শুরুর দিকে মন খারাপ হলেও এখন অনেকটা মেনে নিয়েছে সে। উল্টো মাঝে মাঝে শাহীনই এখন সবার সঙ্গে ভাব করে চলে। এ কারণে কলেজে তার অনেক বন্ধু।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট এর মতে, উচ্চতায় যে দেশের মানুষেরা এগিয়ে তাদের তুলনায় বাংলাদেশসহ মোট চারটি দেশের ছেলে-মেয়েরা নিম্নমানের পুষ্টির কারণে সাত ইঞ্চির বেশি উচ্চতা হারাচ্ছে। 

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে ছোট মেয়েদের (১৯ বছর বয়সী) দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম দেখা গেছে। বাকি তিনটি দেশ নেপাল, গুয়াতেমালা ও তিমুর।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহযোগিতায় দ্য ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা ২০০ দেশের ৬৫ মিলিয়ন (৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী) অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে গবেষণাটি করেছেন। ২০১৯ সালে সংগ্রহ করা এই তথ্যে সবচেয়ে বেশি লম্বা দেখা গেছে নেদারল্যান্ডস, মন্টেনেগ্রো, ডেনমার্ক এবং আইসল্যান্ডের ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের। 

বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক এই পর্যবেক্ষণে লম্বা দেশের চেয়ে খাটো দেশের কিশোর-কিশোরীদের ওজনও কম দেখা গেছে। ফলাফলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের গড় উচ্চতা যতটুকু নেদারল্যান্ডসের ১১ বছর বয়সীদের ততটুকু।

গবেষণা প্রতিবেদনের জ্যেষ্ঠ লেখক মজিদ এজাতি বলেছেন, ‘এতে বোঝা যাচ্ছে স্কুলে যাওয়ার আগে এবং স্কুলে যাওয়ার দিনগুলোতে বাচ্চাদের ওপর বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগে বড় পার্থক্য আছে। করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সময়ে অনেক দরিদ্র পরিবার পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না।

সবচেয়ে খাটোর তালিকায় বাংলাদেশের কিশোররা না থাকলেও উচ্চতা অনুযায়ী ওজনের সবচেয়ে নিম্নমানের তালিকায় তাদের দেখা গেছে। কার ওজন কত হওয়া উচিত, সেই সূচকে বিএমআই বা বডি ম্যাস ইনডেক্স বলে। ভারত, বাংলাদেশ, তিমুর, ইথিওপিয়ার ছেলে-মেয়েদের বিএমআই সবচেয়ে কম। শুধু মেয়েদের মধ্যে জাপান ও রোমানিয়ার কিশোরীদের সবচেয়ে কম।

আরও খবর

Sponsered content

WP Twitter Auto Publish Powered By : XYZScripts.com