সারাদেশ

প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ এ সম্পর্কে আইনি পরামর্শ

  প্রতিনিধি ১৬ এপ্রিল ২০২৩ , ১:৩২:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান

এ বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে পাঠকের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান।

আমার বিয়ে হয় ৭ বছর আগে। সংসার শুরুর দেড় বছরের মধ্যেই এক মেয়ের জন্ম হয়। এর কয়েক মাসের মধ্যেই আমার স্বামী কাজের জন্য সৌদি আরবে চলে যান। বছর খানেক পর যোগাযোগ অনিয়মিত হয়ে পড়ে। গত দুই বছর ধরে তিনি যোগাযোগ করতে অনীহা দেখাচ্ছেন। তিনি বিদেশ থেকে আসতে চান না বলে জানিয়েছেন। বিদেশ থেকে আসতে না পারলে তাঁকে তালাক দিতে বলা হয়। তিনি তালাক দিতেও চান না। আমি খুবই অসহায় বোধ করছি। এখন আমি কী করতে পারি? আমি তালাকনামা দিলে কি তা কার্যকর হবে? আমি কি দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারব? আমার সন্তান কি তার বাবার সম্পত্তিতে অংশ পাবে? সন্তানের অভিভাবকত্ব কি আমি পাব? পরামর্শ আশা করছি। ফারহানা, কুমিল্লা প্রিয় ফারহানা, মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী আপনার কাবিননামার ১৮ নম্বরে একটি কলাম আছে, যেখানে উল্লেখ করা আছে যে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করেছে কিনা। সেটাতে আপনি যদি ‘হ্যাঁ’ লিখে থাকেন, তাহলে আপনি স্ত্রী হয়ে আপনার স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন। এটাকে তালাক-ই-তাওফিজ বলা হয়।

কিন্তু যদি আপনার কাবিননামায় উক্ত স্থানে হ্যাঁ নাও লেখা থাকে, তবুও (২০১৭ সালে সর্বশেষ সংশোধিত) মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯-এর আওতায় বিবাহবিচ্ছেদ পেতে পারেন। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া যদি আপনার স্বামী তিন বছর ধরে তাঁর বৈবাহিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, অথবা যদি দুই বছর ধরে তিনি ভরণপোষণ না দিয়ে থাকেন, তাহলেও আপনি বিচ্ছেদের ডিক্রি পারিবারিক আদালতের কাছে পেতে পারেন।

আপনার এক শিশুকন্যা রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বন্ধন অটুট থাকুক আর বিচ্ছেদ হোক, আইনগতভাবে সন্তানের অভিভাবক হচ্ছেন তার বাবা। তবে শিশু বয়সে সন্তানের দেখাশোনা, হেফাজত বা তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়ার বেলায় আদালত সব সময়ে দেখতে চান যে, সন্তানের মঙ্গলের জন্য উত্তম কী। শিশুসন্তানের হেফাজত বা দেখাশোনার ভার আদালত সাধারণত মাকেই দিয়ে থাকেন। কন্যাসন্তানের জন্য সেটি আরও বেশি প্রযোজ্য। সে ক্ষেত্রে আপনার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটলে আপনার কন্যাসন্তানের দেখাশোনার দায়িত্ব আপনারই পাওয়ার কথা। আপনার স্বামী এমনিতেই বিদেশে থাকেন। তাই আদালত আপনাকেই হেফাজত দেবেন। তবে অপর পক্ষ থেকে হয়তো একটা চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হতে পারে; যাতে সন্তানের দাদি তাঁর হেফাজতের ভার পান।

স্বামী-স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ অথবা তালাকের পরেও বাবা হচ্ছেন সন্তানের অভিভাবক, তাই প্রতিপালনের দায়িত্ব তাঁর ওপর বর্তায়। যে কারণে স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরও আপনার কন্যার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের দায়িত্ব আপনার স্বামীর। একইভাবে আপনার সন্তান অবশ্য বাবার সম্পত্তিতে তার যথাযথ অংশটা পাবে। আপনি যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন তাহলেও আপনার সন্তান সবই পাবে। আপনি যদি আদালতকে দেখিয়ে দিতে পারেন যে, আপনার নতুন সংসারে আপনার মেয়েটা নিরাপদ, সুস্থ ও সুখী এবং আপনার মেয়েও যদি আপনার সঙ্গে বসবাস করতে চায়, তাহলে আপনি নতুন বিয়ে করলেও আদালত তার হেফাজত বা দেখাশোনার ভার আপনাকেই দেবেন।

আরও খবর

Sponsered content

WP Twitter Auto Publish Powered By : XYZScripts.com