সারাদেশ

বরিশালের শেবাচিমে গলার সমস্যায় ভর্তি হওয়ার পর শিশুর অস্ত্রোপচার হলো তলপেটে

  নিজস্ব প্রতিবেদক: ২৪ জুলাই ২০২৩ , ২:০০:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘাড়ের সমস্যা নিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ভর্তি হয়েছিল ৬ বছরের শিশু রায়হান। চিকিৎসকদের পরামর্শে শারীরিক পরীক্ষা শেষে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় তাকে। দেড় ঘণ্টার অপারেশন শেষে রায়হানকে যখন বেডে নিয়ে আসা হয় তখন দেখা গেলো তার ঘাড়ে নয় অপারেশন করা হয়েছে তলপেটে। এ সময় রায়হানের মা-বাবা চিকিৎসকদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বরত চিকিৎসক ভুল অপারেশনের কথা স্বীকার করেন। চিকিৎসা বিশ্লেষকরা বলছেন, অনুমতি ছাড়া কারও শরীরে অস্ত্রোপচার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। শরীরের যেকোনো স্থানে অপারেশন করার আগে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতালে এমন ভুল চিকিৎসার শিকার রায়হান ইতোমধ্যে ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। যে কাউকে দেখলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। ছেলের শরীর থেকে কিডনি সরিয়ে ফেলা হয়েছে কীনা এমন আতঙ্কে রয়েছেন তার মা-বাবা। হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে গত শনিবার (২২ জুলাই) এই ভুল চিকিৎসার ঘটনা ঘটে। সোমবার (২৪ জুলাই) সকালে শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়। জানা গেছে, রায়হান এয়ারপোর্ট থানা এলাকার নথুল্লাবাদ লুৎফর রহমান সড়কের দিনমজুর শাহজালালের ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করে। জন্ম থেকেই সে ঘাড়বাকা রোগে আক্রান্ত। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার এই সমস্যা বাড়ছিল। রায়হানের মা সুমি আক্তার বলেন, ঘাড়ের সমস্যা নিয়ে বহিঃর্বিভাগে ডাক্তার দেখালে সেখান থেকে ভর্তির জন্য বলেন। আমরা ১৬ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হই। ভর্তির পর ওর গলার ৫ ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডা. তৌহিদুল ইসলাম জানান ঘাড়ের একপাশের কিছু মাংস বেড়েছে। অপারেশন করাতে হবে। সিরিয়াল অনুযায়ী শনিবার আমার ছেলেকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। দেড় ঘণ্টার মতো অপারেশন থিয়েটারে রেখে যখন বের করে তখন দেখি ওর ঘাড়ে কোনো অপারেশন করা হয়নি। ডানপাশের তলপেটে অপারেশন করা হয়েছে। চিকিৎসকদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় হার্নিয়া অপারেশন করেছেন। সুমি বলেন, আমার ছেলেরতো কোনো হার্নিয়ার সমস্যা নেই। আমার ছেলের ঘাড়বাকা। ডাক্তার বলেছেন, গলায় অপারেশন করা হবে। কিন্তু তারা আমাদের না জানিয়ে আমার ছেলের তলপেটে অপারেশন করে নিয়ে এসেছে। শেষে ডাক্তারকে এসব বিষয় জানালে তারা বলেন ভুল চিকিৎসা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কেন এই ঘটনা ঘটলো তা জানতে চাওয়ায় আমার ছেলের নাম কেটে দিয়েছে হাসপাতাল থেকে। ছেলের ঘাড়বাকা সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়ে তার কোনো চিকিৎসা পেলাম না। রায়হানের বাবা শাহজালাল বলেন, আমার ছেলের অপারেশন হওয়ার কথা গলায়। কিন্তু তারা তা না করে তলপেটে করেছে। আমার ছেলের এতবড় সর্বনাশ কেন করলো তারা? আমার ছেলের কিডনি নিয়ে গেছে কিনা জানি না। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। আমি চাই তদন্ত করে এই ভুল চিকিৎসা যে দিয়েছে সেই ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমার ছেলের ভবিষ্যতে যে ক্ষতি হবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? তিনি আরও বলেন, অনুমতি ছাড়া ডাক্তার আমার ছেলের তলপেটের অপারেশন করতে পারেন না। তিনি অন্য কোনো ঘটনা ঘটিয়েছেন। এখন আমার ছেলের কিছু হয়ে গেলে আমি কি করবো? শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। রোগী ঘাড়বাকা রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। ঘাড়বাকা রোগের সঙ্গে তার হার্নিয়া রোগও ধরা পড়েছে। ঘাড়বাকা রোগটি একটু জটিল, তাছাড়া দুটি অপারেশন একসঙ্গে করা যায় না। এজন্য চিকিৎসক হার্নিয়া অপারেশন করেছেন। ঘাড়বাকা অপারেশন পরবর্তীতে করা হবে। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগে ঘাড়বাকা অপারেশন করার কথা বলে নিয়ে শরীরের অন্য কোথাও অস্ত্রোপচার বিধি মোতাবেক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগী ও ডাক্তারের মধ্যে কাউন্সেলিং গ্যাপ ছিল। যে কারণে এমন অভিযোগ উঠছে। তবে এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ আমরা পাইনি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশালের সভাপতি ডা. ইসতিয়াক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘাড়বাকা রোগের অপারেশনের কথা বলে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে শরীরের অন্য কোথাও অস্ত্রোপচার করা সম্পূর্ণ বেআইনি, ভয়াবহ বেআইনি। রোগীর শরীরের খুব ছোট একটা অস্ত্রোপচার করতে গেলেও লিখিত অনুমতি নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও যদি অনুমতি না নিয়ে কোনো অস্ত্রোপচার করে সেটিও আইন পরিপন্থি। অবশ্যই রোগীকে আগে কাউন্সেলিং করতে হবে এবং তার সজ্ঞানে লিখিত অনুমতি নিতে হবে।

আরও খবর

Sponsered content

WP Twitter Auto Publish Powered By : XYZScripts.com