সারাদেশ

ভোলা-২
আওয়ামী লীগের অর্ধডজন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী: বিএনপির হাফিজ ইব্রাহীম

  প্রতিনিধি ২০ মার্চ ২০২৩ , ১২:৫৩:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

জেলা প্রতিনিধি(ভোলা):

জাতীয় সংসদের ভোলা-২ আসনটি বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলা নিয়ে গঠিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুলসহ অর্ধডজন নেতা দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির একক প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহীম।  

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সংবিধানপ্রণেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষাসৈনিক রেজা-এ-করিম চৌধুরী (চুন্নু মিয়া)। ১৯৭৩ সালে এই আসনেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।

বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান নিয়ে আসনটি পুনঃবিন্যস্ত হওয়ার পর ১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ। ১৯৮৮ সালে বাঘা সিদ্দিক নামে খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য হন তোফায়েল আহমেদ। তোফায়েল আহমেদ ভোলা-১ ও ভোলা-২ আসনে নির্বাচিত হওয়ার পর ভোলা-২ আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মোশারেফ হোসেন শাজাহান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ নির্বাচিত হন। ১২ জুন ১৯৯৬ সালে তোফায়েল আহমেদ নির্বাচিত হন। ১ অক্টোবর ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তোফায়েল আহমদকে হারিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম নির্বাচিত হন। ২৯ নভেম্বর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদ পুনরায় আসনটি ফিরে পান।

দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদ ভাতিজা আলী আজম মুকুলকে আসনটি ছেড়ে দেন।

দুটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ভোলা-২ আসনের মেটি ভোটার সংখ্যা ২৯৭০২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫২০৯৬ জন এবং নারী ভোটার ১৪৪৯২৭ জন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিসহ (বিজেপি) বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। মনোনয়নের জন্য শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তদবির শুরু করেছেন। পাশাপাশি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। ভোটারদের সঙ্গেও মতবিনিময় করছেন।

সম্প্রতি বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলায় গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আলী আজম মুকুলের যোগাযোগ রয়েছে বেশি। গণসংযোগ ও সাংগঠনিক যোগাযোগের দিক থেকে এগিয়ে আছেন তিনি। এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে আলী আজম মুকুল দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নির্বাচনী এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। তৃণমূলের সব নেতাকর্মী তার সঙ্গেই আছে, তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।

তবে মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে নেই ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী নাজিউর রহমান মনজুর ছেলে, ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থের ছোট ভাই তরুণ রাজনীতিবিদ কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ড. আশিকুর রহমান শান্ত। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলায় জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। শান্ত সম্প্রতি ভোলায় এসে প্রায় এক সপ্তাহ অবস্থান করে নিজ নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা ও মতবিনিময় করেছেন। আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে কাজ করার জন্যও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হাওলাদার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ ভোলা জেলা শাখার সাবেক সদস্য মো. ওমর শরীফ জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতিয়ার হিসাবে কাজ করতে চাই। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের ছেলে ডা. আফতাব ইউছুফ রাজ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।

এদিকে বিএনপি দলীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, হাফিজ ইব্রাহীম ও তার স্ত্রী মাফরুজা সুলতানার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। দুদকের এক মামলায় তার ১০ বছর ও স্ত্রীর তিন বছরের কারাদণ্ড হওয়াসহ নানা কারণে খানিকটা কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও রাজনীতির মাঠে তিনি সক্রিয়। বোরহানউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান বলেন, একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহীম। মামলা-সংক্রান্ত কারণে তিনি যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, তবে তার ছেলে ব্যারিস্টার মারুফ ইব্রাহীম আকাশ প্রার্থী হতে পারেন। তিনি জানান, হাফিজ ইব্রাহিমের নির্বাচন করতে আইনি কোনো বাধা নেই, হাইকোর্ট থেকে মামলার রায় স্থগিত আছে।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ভোলা জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ওবায়েদ বিন মোস্তফাও নিজ নিজ দল থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানান।

আরও খবর

Sponsered content

WP Twitter Auto Publish Powered By : XYZScripts.com