সারাদেশ

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের সেই সাগরিকার বাজিমাত

  প্রতিনিধি ২৩ জুন ২০২৩ , ১:৩৩:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী প্রতিনিধি:

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ছয় হাজার ২৬৩ জন ভোটারের সমর্থন নিয়ে বাজিমাত করলেন তৃতীয় লিঙ্গের সেই সাগরিকা। প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর কেউ রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আর প্রথমবারই সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে বাজিমাত করেছেন সেই সুলতানা আহমেদ সাগরিকা।

নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস তার। জনগণের ভালোবাসার এই ঋণ জনকল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে শোধ করতে চান সাগরিকা।

বুধবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ভোটের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন করা হয়। রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন এ ফল ঘোষণা করে জানান, সাগরিকা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।

সাগরিকা রাসিকের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আদায়ের সংগঠন দিনের আলো হিজরা সংঘ এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সুবিধাবঞ্চিত এই সাগরিকা হিজড়া নবম শ্রেণিতে ওঠার পর আর বিদ্যালয়ে টিকতে পারেননি। আগের ক্লাসগুলোও পার করেছেন নানান সীমাবদ্ধতায়। শেষমেশ বাড়িও ছাড়তে হয়। এরপর নানান সংগ্রামে কেটেছে জীবন। সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সাগরিকা এখন জনপ্রতিনিধি। এখন জনগণের সেবা করতে চান তিনি।

সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে তৃতীয় লিঙ্গের সুলতানা আহমেদ সাগরিকা বলেন, ভোটাররা আমাকে বলেছিলেন, তোমাকে চিনি, পাশে আছি, চিন্তা করো না। সেই কথা রেখেছেন ভোটাররা। প্রথম নির্বাচনেই ভোটারদের এমন ভালোবাসা পাব তা ভাবিনি। বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভোটাররা আমাকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। সেই জনগণের কল্যাণেই কাজ করব। বিশেষ করে একটি অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের জন্য ব্যবস্থা করাসহ সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি হট নম্বর চালু করব।

২০০০ সালে‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামের সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৫ সালে মহিলা অধিদপ্তর ও ২০০৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায় সংগঠনটি। সাগরিকা হিজড়াদের ভোটাধিকার, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশীদারিত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। ২০২২ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। নির্বাচনে তার এই অংশগ্রহণকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

সুবিধাবঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে সাগরিকা ইতিবাচক তৎপরতা দেখাবেন- এমনটাই প্রত্যাশা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীদেরও।

সাগরিকা বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড। আমি শতভাগ আশাবাদী ছিলাম; কারণ মানুষ ব্যতিক্রম কিছু চেয়েছিলেন। এই ওয়ার্ডে আমি ছাড়াও পাঁচজন প্রার্থী ছিলেন। সবার মধ্যে আমার জনপ্রিয়তা বেশি। আমি আনারস প্রতীক পেয়েছিলাম। আমার কোথাও কোনো পিছুটান নেই। ভোটাররা আমাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেছেন। আমি আমার জনগোষ্ঠী ছাড়াও ওয়ার্ডের বাসিন্দারের অধিকার আদায়ে কাজ করব।

আরও খবর

Sponsered content

WP Twitter Auto Publish Powered By : XYZScripts.com