ডা. এ্যমিলা ফেরদৌস ১০ অক্টোবর ২০২৪ , ৫:২৩:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ
স্তন ক্যানসার একটি মারাত্মক ব্যাধি। জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন করতে প্রতিবছর অক্টোবরজুড়ে বিশ্বব্যাপী ‘স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস’ হিসেবে পালন করা হয়।
আমাদের দেশে বিশেষভাবে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে ১০ অক্টোবর। দিবসটির এ বছর প্রতিপাদ্য হলোÑ ‘স্ক্রিনিং জীবন বাঁচায়’। আমাদের দেশে প্রতিবছর ১৩ হাজারের বেশি মানুষ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মারাও যান অনেকে। তবে যারা বেঁচে থাকেন, তাদের হারাতে হয় দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। গবেষকদের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ক্যানসার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের হারও।
স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালির লসিকা (কোষ রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এ ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই হলো ক্যানসার।
স্তন ক্যানসারের লক্ষণ : স্তনের কোনো অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোনো লিম্প দেখা যাওয়া। স্তনের ওপরের ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, অনেকটা কমলালেবুর খোঁসার মতো। স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন। স্তনবৃন্ত ভেতরে ঢুকে থাকা, অসমান বা বাঁকা হয়ে থাকা। স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া। স্তনবৃন্তের আশপাশে র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া অথবা র্যাশ ছাড়াও চুলকানির মতো অনুভূতি হওয়া। বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেওয়া। স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া। স্তনের ত্বক লালচে, ক্ষত, ফোলাভাব দেখা দেওয়া। কাঁধ ও ঘাড়ের ব্যথাও ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
কারণ : স্তনের অস্বাভাবিক কোষগুলো বিভাজিত হলে স্তন ক্যানসার হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বেশ কিছু ঝুঁকির কারণ রয়েছে, যা স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এই ঝুঁকির কারণগুলো হলো- বয়স ৫৫ বছরের বেশি হলে স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সাধারণত নারীদের হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যদি বাবা-মা, ভাইবোন, শিশু অথবা অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের এ জাতীয় রোগ থাকে, তবে স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি হয়। তামাক স্তন ক্যানসারসহ অনেক ধরনের ক্যানসারের প্রধান কারণ। অ্যালকোহল সেবনে স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্থূলতা ব্রেস্ট ক্যানসারের পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যদি আগে, বিশেষ করে মাথা, ঘাড় বা বুকে রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়া হয়, তা হলে স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ব্যবহার করে থাকেন, তাদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে বলে গবেষকরা বলে প্রমাণ করেছেন।
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা : স্তন ক্যানসার হলো একটি মারাত্মক মরণব্যাধি। তবে স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি চিকিৎসা করানো হয়, তা হলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু যদি সময়মতো চিকিৎসা না করানো হয়, তা হলে ক্যানসার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এর ফলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। হোমিওপ্যাথি লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। রোগ ও পারিবারিক ইতিহাস এবং বর্তমান সমস্যা জেনে প্রয়োজনীয় ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হলে স্তন ক্যানসার থেকে মুক্তি আশা করা যায়।
লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, চিকিৎসক ও গবেষক
ফরচুন শপিংমল ক্লিনিক, মালিবাগ, ঢাকা। ০১৭২১১৮৪১৩৯